প্রেসার হাই হলে কী খেতে হবে

প্রেসার হাই হলে কী খেতে হবে উচ্চ রক্তচাপ, যাকে হাই ব্লাড প্রেসার বা হাইপারটেনশন বলা হয়, আধুনিক যুগের এক নীরব ঘাতক। এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি সমস্যা এবং চোখের সমস্যা সহ বহু জটিল রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোনো না কোনোভাবে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তবে সুখবর হলো—সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা পালনের মাধ্যমে রক্তচাপ সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

এই প্রবন্ধে আমরা জানব প্রেসার হাই হলে কী খেতে হবে এবং কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব

রক্তচাপের মাত্রা অনেকাংশেই নির্ভর করে আমাদের খাওয়া-দাওয়ার ওপর। অতিরিক্ত লবণ, চর্বি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ। তাই খাবার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে যত্নবান হওয়া জরুরি।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ হওয়া উচিত প্রায় ১২০/৮০ mmHg। যদি এটি ১৩০/৮০ mmHg বা তার বেশি হয়, তবে তা উচ্চ রক্তচাপ বলে ধরা হয়।

প্রেসার হাই হলে যেসব খাবার খাওয়া উচিত

১. পটাশিয়ামযুক্ত খাবার

পটাশিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান যা শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম (লবণ) বের করে দেয় এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

যেসব খাবারে পটাশিয়াম বেশি থাকে:

  • কলা
  • মিষ্টি আলু
  • পালং শাক
  • অ্যাভোকাডো
  • টমেটো
  • কমলা ও কমলার রস

যেমন এই খাদ্য পরিকল্পনাটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। DASH মানে বুঝাই “Dietary Approaches to Stop Hypertension”। বাংলা “হাইপারটেনশন বন্ধ করার জন্য খাদ্যতালিকাগত পদ্ধতি”।

DASH ডায়েটে থাকে:

  • শাকসবজি ও ফলমূল
  • চর্বিহীন দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
  • সম্পূর্ণ শস্য (whole grain) যেমন ওটস, ব্রাউন রাইস
  • বাদাম ও বীজ
  • মাংসের পরিবর্তে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন (ডাল, মসুর)

৩. ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, যা রক্তচাপ কমানোর সঙ্গে সম্পর্কিত।

ফাইবারযুক্ত খাবার:

  • ওটমিল
  • ব্রাউন ব্রেড
  • আপেল, নাশপাতি
  • সবুজ শাকসবজি

৪. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড

ওমেগা-৩ হৃদয়বান্ধব ফ্যাটি অ্যাসিড যা রক্তচাপ হ্রাসে সহায়তা করে।

ওমেগা-৩ এর উৎস:

  • সামুদ্রিক মাছ (বিশেষ করে স্যামন, টুনা, সারডিন)
  • চিয়া সিড
  • ফ্ল্যাক্স সিড
  • আখরোট

৫. কম লবণযুক্ত খাবার

লবণ বা সোডিয়াম বেশি খেলে শরীরে পানি ধরে রাখে, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে।

লবণ কমানোর উপায়:

  • রান্নায় কম লবণ ব্যবহার করা
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার (চিপস, প্যাকেট স্যুপ) এড়িয়ে চলা
  • খাবারে স্বাদ আনার জন্য লেবু, রসুন, ধনে ব্যবহার করা

৬. ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার

এই দুই খনিজ উপাদান হৃদপিণ্ড ও রক্তনালীর কাজকে সহায়তা করে।

উৎস:

  • দুধ ও দই
  • বাদাম (আলমন্ড, কাজু)
  • শাকসবজি (ব্রকোলি, কেল)
  • ডাল

প্রেসার হাই হলে যেসব খাবার এড়ানো উচিত

১. অতিরিক্ত লবণ

প্রতিদিন ১,৫০০ – ২,৩০০ মিলিগ্রামের বেশি সোডিয়াম গ্রহণ করা উচিত নয়। কিন্তু আমরা সাধারণত এর চেয়ে অনেক বেশি খেয়ে ফেলি।

২. প্রক্রিয়াজাত ও ফাস্ট ফুড

বুরগার, পিজ্জা, সসেজ, ক্যানড খাবার, ইনস্ট্যান্ট নুডলস – এগুলোতে সোডিয়াম ও ট্রান্স ফ্যাট থাকে যা প্রেসার বাড়িয়ে দেয়।

৩. লাল মাংস ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার

লাল মাংস (গরু, খাসি) বেশি খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে, ফলে রক্তচাপও বেড়ে যেতে পারে।

৪. চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার

অতিরিক্ত চিনি খেলে ওজন বাড়ে, আর অতিরিক্ত ওজন প্রেসার বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ।

৫. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল

চা-কফি বা অ্যালকোহল বেশি খেলে তা রক্তচাপ অস্থায়ীভাবে বাড়িয়ে তোলে। যারা আগে থেকেই হাই প্রেসারে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি আরও বিপজ্জনক।

অতিরিক্ত কিছু উপদেশ

  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন: শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন: হাঁটা, সাইক্লিং, যোগব্যায়াম ইত্যাদি দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট করলে রক্তচাপ অনেকটাই কমে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: অতিরিক্ত ওজন রক্তচাপের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
  • ধূমপান ও তামাক ব্যবহার বন্ধ করুন: এগুলো রক্তনালীর ক্ষতি করে এবং রক্তচাপ বাড়ায়।

ডায়াবেটিস এর প্রতিকার: ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণে রাখুন সুগার

উপসংহার

প্রেসার হাই হলে কী খেতে হবে উচ্চ রক্তচাপ এখন একটি সাধারণ সমস্যা হলেও তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, যদি আমরা সচেতন হই এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনি। সঠিক খাবার নির্বাচন, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ—এই তিনটি দিক যত্ন নিয়ে চললে উচ্চ রক্তচাপকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। মনে রাখবেন, প্রতিদিনের ছোট ছোট পরিবর্তনই দীর্ঘমেয়াদে বড় ফল এনে দিতে পারে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *